দূর্গা
পূজা কলকাতার মূল আকর্ষণ হলেও
বড়দিন উদযাপনেও তিলোত্তমা কখনো
পিছিয়ে থাকে নি । কলকাতাবাসী
ভালোবাসা আর উৎসবের রং
দিয়ে বড়দিনকে উদযাপন করে। যেমন দূর্গাপূজার সময়
রেড রোড কার্নিভাল মন
কাড়ে, তেমনই পার্ক স্ট্রিটের খ্রীষ্টমাস কার্নিভাল শহরবাসীর জন্য বিশেষ আকর্ষণ
হয়ে ওঠে।
শীতের
হালকা আমেজে আর বছরের
অন্তিমলগ্নের উষ্ণতায় কলকাতা নতুন রূপে সেজে
ওঠে। নিউ মার্কেট, পার্ক
স্ট্রিট চত্বরের গলিগুলি ঔপনিবেশিকতার ছোঁয়া নিয়ে যেন সময়ের
স্রোতেও তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখে।
কলকাতার
বড়দিনে এবছর কোথায় কোথায় যাওয়া যায় আসুন দেখে নি:
সেন্ট
পলস ক্যাথেড্রাল
১৮৪৭
সালে ইন্দো-সৈরসেনী স্থাপত্যে নির্মিত সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল বড়দিনের
সময় একটি আকর্ষণীয় স্থান । ২৪ সে ডিসেম্বর
মধ্যরাতে বিশেষ প্রার্থনায় এখানে আপনারা যোগ
দিতে পারেন। আসন সংখ্যা সীমিত,
তাই সময়মতো পৌঁছাতে ভুলবেন না।
এছাড়াও সেন্ট জন্স, সেন্ট আন্দ্রেউস, সেন্ট স্টিফেন্স, পর্তুগিজ চার্চ, মিশন চার্চ, ও
গ্রিক অর্থডক্স চার্চেও রাতভর আলোকিত পরিবেশে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
পার্ক
স্ট্রিটে খ্রীষ্টমাস কার্নিভাল
বড়দিনে
পার্ক স্ট্রিটে আলোয় মোড়ানো রাস্তা,
মনোমুগ্ধকর সাজসজ্জা এবং প্রাণবন্ত পরিবেশ
আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানকার রেস্তরাঁ ও ক্যাফেগুলি তে প্রিয়জনের সঙ্গে কিছু
মুহূর্ত বন্দি করে রাখুন।
বো
ব্যারাকস
বো
ব্যারাকস, একসময়ের ব্রিটিশ সেনা ছাউনি, আজ
এংলো-ইন্ডিয়ান ঐতিহ্য রক্ষার দৃষ্টান্ত। বড়দিনে এখানকার কেক, ওয়াইন, এবং
ওপেন-এয়ার ডান্স পার্টি
এই জায়গাকে কলকাতার মিনি গোয়া-র রূপ দেয়।
অ্যালেন
পার্ক ক্রিসমাস মার্কেট
অ্যালেন
পার্কে হস্তনির্মিত অলংকার, ঘর সাজানোর জিনিস,
এবং বিভিন্ন উৎসবের খাবার নিয়ে ক্রিসমাস মার্কেট
সেজে ওঠে। প্রিয়জনের জন্য
বিশেষ উপহার কিনুন আর বড়দিনকে স্মরণীয়
করে তুলুন।
ওয়েলিংটন স্ট্রিট ভুটিয়া মার্কেট
তিব্বতি
ব্যবসায়ীদের নিয়ে তৈরি ভুটিয়া
মার্কেট শীতবস্ত্র কেনার অন্যতম সেরা
জায়গা। এখানে জ্যাকেট,
মাফলার, কাশ্মীরি শাল ইত্যাদি সাশ্রয়ী
মূল্যে পাওয়া যায়। উত্তরের হেদুয়া
পার্কেও এর শাখা বসে।
রসনার
তৃপ্তিতে কলকাতা কখনোই তার অতিথিদের নিরাশ
করেনি। ক্রিসমাস হোক কিংবা অন্য
কোনো উৎসব, কলকাতার আপ্যায়নে কখনোই ত্রুটি দেখা যায় না।
যদি আপনি আমেরিকান বা
ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে ক্রিসমাস ২০২৪ উপভোগ করতে চান, কলকাতার
বুকে সহজেই পেয়ে যাবেন ফ্রুট
কেক, বেকড ব্রেড, টার্কি,
ঘরে তৈরি ওয়াইন, হাঁসের
রোস্ট ইত্যাদি।
তবে
এই শীতের রাতে চাইনিজ স্টলগুলোতে
দাঁড়িয়ে মোমো, ডাম্পলিং বা উষ্ণ স্যুপের
স্বাদ নেওয়াও কিন্তু বেশ উপভোগ্য, তাই
না? আর কেক ছাড়া
তো বড়দিন অসমাপ্তই থেকে যায়! তাহলে
চলুন, খুঁজে দেখি কলকাতার কেকের
ঠিকানাগুলো:
নাহুম
অ্যান্ড সন্স (Nahoum & Sons)
১৯০২
সাল থেকে হগ মার্কেটের
এই ইহুদি বেকারি তার বিখ্যাত পাম
কেক, রাম বল, এবং
প্যাস্ট্রি দিয়ে সবার মন
জয় করে আসছে।
ফ্লুরিজ
(Flurys)
পার্ক
স্ট্রিটের প্রাণকেন্দ্র ফ্লুরিজ উৎসবের বিশেষ কেক ও চমৎকার
পরিবেশের জন্য জনপ্রিয়।
সালডানহা
বেকারি (Saldanha)
গোয়ান
পরিবারের পরিচালিত এই বেকারি বিখ্যাত
কেক এবং কুকিজের জন্য
বিখ্যাত।
কপিলা
আশ্রম (ঋষি বাবুর দোকান)
উত্তর
কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী দোকানটি ১৯৫৬ সালে শ্রীমানী পরিবার
প্রতিষ্ঠা করেন, মূলত মধ্যবিত্তের স্বাদ ও সাধ্যের কথা মাথায় রেখেই । প্রায় সাত দশকেরও
বেশি সময় ধরে কপিলা আশ্রম তাদের ফ্রুট কেকের গুণমানে সর্বসাধারণের কাছে জনপ্রিয়তা
বজায় রেখেছে।
বিশেষত,
সুগার ফ্রি ফ্রুট কেক এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কেকের জন্য এই দোকানটি আজও খ্যাতির শীর্ষে।
‘বড়দিন সর্বসাধারণের’—এই ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে বিগত ১০ বছর ধরে তারা মাত্র ১০০ টাকায়
(৪০০ গ্রাম) ফ্রুট কেক বাজারে এনেছে, যা সকলের মধ্যে বিশেষ সাড়া ফেলেছে।
পরিশেষে ,
কলকাতার
বড়দিন উদযাপন এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যেখানে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধনে শহর পরিণত হয়
এক বর্ণময় উৎসবস্থলে। পার্ক স্ট্রিটের আলোঝলমলে রাস্তা থেকে বো ব্যারাকসের প্রাণবন্ত
ডান্স পার্টি, সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালের গভীর প্রার্থনা থেকে শুরু করে অ্যালেন পার্কের
ক্রিসমাস মার্কেট—শহরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকে উৎসবের উষ্ণতা।
শুধু
তাই নয়, নাহুম থেকে কপিলা আশ্রম পর্যন্ত বিখ্যাত বেকারিগুলোর সুস্বাদু কেক আর তিব্বতি
বাজারের শীতের পোশাক কলকাতার বড়দিনকে আরও বিশেষ করে তোলে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই
উদযাপন যেমন স্থানীয় বাসিন্দাদের আকর্ষণ করে, তেমনই আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মনেও বিশেষ
স্থান করে নেয়।
তাই,
বড়দিন ২০২৪-এ প্রাণের শহর কলকাতার এই মুগ্ধকর পরিবেশ উপভোগ করুন । আর আপনার
বড়দিনের গল্প আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে একেবারেই ভুলবেন না। শুভ বড়দিন!
No comments:
Post a Comment